অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন রাজা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন রাজা। বড় হতাশ লাগছে তাঁর। মানুষই যদি বিরোধিতা করে, তাহলে তিনি লড়বেন কাদের নিয়ে? আর করবেনই বা কাদের জন্য? ধুস, আর লড়াই করে লাভ নেই।
এমন সময়, দারোয়ান এসে বলল একজন গেঁয়ো ব্রাহ্মন দেখা করতে চাইছে। একটু বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, এখন আমার সময় নেই বলে দে। দারোয়ান বলল, বলেছি। কিন্তু উনি যেতে চাইছেন না। তখন রাজা বললেন, পাঠিয়ে দে।
এক ব্রাহ্মন ঘরে ঢুকলো। খাটো ধুতি, গায়ে নামাবলি, মাথায় টিকি। টিকি দেখলেই রাজার মাথাটা যায় গরম হয়ে। রুক্ষ স্বরে বললেন কী চাই? ব্রাহ্মন বলতে শুরু করলেন।
আমি নদীয়ার মহাদেব ভট্টাচার্য। থামলেন একটু, বোধহয় গুছিয়ে নিলেন একটু। আবার শুরু করলেন। জানেন, সেদিন ছিল বৈশাখ মাস। টোল থেকে ফিরতেই অপর্ণা এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো কোলে। জল দিলো, গামছা দিলো, বাতাস দিলো পাখা করে। আমার জন্য তার যতো চিন্তা। বাপে মেয়েতে আদর খাচ্ছি। তখন ওর মা ডাকলো ঘর থেকে। ভেতরে যেতে বলল, মেয়ের তো ৭ বছর বয়স হোল। আর কতদিন ঘরে বসিয়ে রাখবে? পাড়ায় যে কান পাতা দায়। আমি বললাম, পাত্র পাচ্ছি কই? যার কাছেই যাই। ১০০০ টাকার কমে পন নেবেনা কেউ। মন্দিরা ফিসফিস করে বলল, সবার তো কপাল সমান হয়না। কিন্তু জাত ধর্ম তো রাখতে হবে। কাল নদীপথে একজন কুলীন ব্রাহ্মন এসেছেন। বয়সটা বেশি। ৭০ এর ঘরে। কিন্তু বংশ উঁচু। ৫০ টাকায় কন্যা উদ্ধার করেন তিনি। আমাদের অপুকে ওর হাতে গৌরি দান করো। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, না না এ হবেনা। কিন্তু সমাজের চাপতো বুঝি। বুঝি সংসারের চাপও। নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করে অপুর সাথে বিবাহ দিলাম। লাল চেলি, গয়না, আলতা, সিঁদুরে মেয়েকে আমার দেবীর মতো লাগছিলো। সে যে কী রূপ কী বলবো!! বোধয় বাপের নজরটাই লেগেছিল সেদিন।
পরদিনই মেয়েকে ছেড়ে জামাই বাবাজীবন আবার পাড়ি দিলেন নদীপথে। আরও কারোর কন্যা উদ্ধার করতে। বলে গেলেন আবার আসবো পরের বৎসর।
আমাদের বাপ মেয়ের আনন্দের জীবন চলছিলো বেশ। সারাক্ষন আমার পিছনে। সব কাজ শিখে গেলো। পারতো না শুধু রান্না। একদিন হাতে ফোস্কা পড়ে কী অবস্থা। আমি ওর মা কে বলে দিলাম, ওকে রান্নার কাজে লাগাবেনা। আগুনে ওর কষ্ট হয়। কী খুশি সেদিন মেয়ে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কতো আদর।
আশ্বিন মাস গড়িয়ে যায়। পুজো আসছে, চারদিকে সাজো সাজো রব। আমি হাট থেকে মেয়ের জন্য লালটুকটুকে শাড়ি, আলতা সব নিয়ে এলাম। মেয়ে খুব খুশি। বলল ওঃ!! কখন যে পড়বো এইসব। বাবা, আমাকে রানীর মতো লাগবে, বলো? আনন্দে আমার চোখ ভিজে উঠলো। অভাবী সংসারে খুশি উপচে পড়লো।
ঠিক তার পরের দিন, জানেন ঠিক পরের দিন। সকাল দশটা হবে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক এলো পত্র নিয়ে। গতকাল নারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় দেহ রেখেছেন। যথাবিহিত বিধি অনুসারে কন্যাকে সতী করার নির্দেশ দিয়েছেন তারা। ভেবেছিলাম, পত্র ছিঁড়ে ফেলবো। কিন্তু পত্রবাহক গ্রামের মাতব্বরদের জানিয়েই এসেছেন আমার বাড়ি। কোন উপায় ছিল না। রাজা বলে উঠলেন তারপর???
তারপর মেয়েকে সাজালাম। নতুন লাল চেলির শাড়ি, গয়না, আলতা, সিঁদুরে মেয়ে সেদিন অপরূপা। গ্রামে উৎসব, ঢাক বাজছে। এয়োরা সবাই ওর মাথার সিঁদুর,ওর আলতা নিচ্ছে। আর ও নিজে কী খুশি সেজেগুজে। ওর পছন্দের দধি মিষ্টান্ন এসেছে ঘর ভরে। জানেন, তার মধ্যেও ও সেসব আমাকে খাওয়াবে বলে ব্যস্ত। কথা বন্ধ হয়ে আসে ব্রাহ্মনের। চোখটা মুছে আবার শুরু করেন। খালি সে বুঝতে পারেনি উৎসবটা কিসের।
এরপর খবর এলো নদীর তীরে চিতা সাজানো সমাপ্ত। সতীমাতাকে নিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন কুলীন সমাজ। মেয়েকে কোলে নিয়ে চললাম। কাঁদিনি একটুও। ওকে বুঝতে দিতে চাইনি কিছুই। চিতার পাশে সমস্ত আনুষ্ঠানিক কাজ মিটলো। মেয়ে অবাক হয়ে দেখছিল সব। আগুন দেওয়া হোল চিতায়। দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো চিতা। মেয়ে বলল বাবা, বাড়ি চলো। আগুনে আমার বড় ভয়। আমি বললাম, আমার গলাটা একবার ছাড় মা। কচি হাত দুটো গলাটা ছাড়তেই ছুঁড়ে দিলাম অগ্নিকুণ্ডে। আগুনের মধ্যে থেকে একটা রিনরিনে গলা পাওয়া গেল, বাবা…আআ…আআ…আআ…আআ…!!!
সেই ডাক আমি ভুলতে পারিনি। তারপর থেকে একদিনও রাত্রে ঘুম হয়নি। উঠতে বসতে খেতে শুতে শুধু এক আওয়াজ। বাবা…আআ…আআ…আআ…আ…!!!! আমি পারিনি তাকে বাঁচাতে। আপনি পারেন। পায়ে ধরি আপনার। মেয়েগুলাকে বাঁচান। কতো মেয়ে গ্রাম ঘরে আপনার মুখ চেয়ে আছে। আছি আমরা, মেয়ের বাপ মা রা। বলতে পারিনা সমাজের ভয়ে। কিন্তু আপনি পারবেন।
উঠে দাঁড়ালেন রাজা রামমোহন রায়। বললেন, আমায় আপনি শক্তি দিলেন। পারতে আমাকে হবেই। এখানে না হলে ব্রিটেন যাবো। প্রিভি কাউন্সিলে দরবার করবো। কথা দিলাম আপনাকে।
বাকিটা ইতিহাস। সেই যুগে দাঁড়িয়ে তাঁর সেই লড়াই কতোটা কঠিন ছিল বলে বোঝানো যাবেনা। কলকাতার রাজ পরিবার থেকে ভারতের পণ্ডিত সমাজ সকলে ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কম নিন্দা অপমানের ঝড় বয়নি তাঁর ওপর দিয়ে। কিন্তু বটবৃক্ষের মতো অটুট ছিলেন তিনি।
স্বর্গের লোভ দেখিয়ে এযে এক লৈঙ্গিক রাজনীতি , এক বর্বরতা তা রাজা রামমোহন রায় বুঝেছিলেন ।নারীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ছিল তার নিরন্তর সংগ্রাম । তিনি জানতেন তাঁর যুক্তি মেনে আপাতত হয়ত দেশবাসী মেনে নিয়েছে , আইন প্রণীত না হলে আবার হয়ত দেখা দেবে সহমরণ । তাই আইন করেই বন্ধ করেন এই নিষ্ঠুর আইন ।
''সত্যকে স্বীকার করে রামমোহন তাঁহার দেশবাসীর নিকটে তখন যে নিন্দা ও অসম্মান পেয়েছিলেন, সেই নিন্দা ও অপমানই তাঁর মহত্ত্ব বিশেষ ভাবে প্রকাশ করে। তিনি যে নিন্দা লাভ করেছিলেন সেই নিন্দাই তাঁর গৌরবের মুকুট।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রাজা রামমোহন রায় (মে ২২, ১৭৭৪ – সেপ্টেম্বর ২৭, ১৮৩৩)ফরাসি বিপ্লবের ঝড়ের মুখে ভারত বর্ষে তাঁর জন্ম। ভারতের হুগলী জেলার অন্তর্গত খানাকুল-কৃষ্ণ নগরের কাছে রাধানগর গ্রামে রাজা রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-রামকান্ত রায়, মাতা-তারিণী দেবী। রামমোহনের পূর্বপুরুষ রাজ সরকারের কাজ করে ‘রায়রায়ান’ উপাধি লাভ করে। তবে তাদের কৌলিক উপাধি ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’। পিতা রামকান্ত ও তারিণী দেবী দুইজনই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। রামাকান্ত শেষ জীবনে বৈষ্ণব হোন এবং হরিনাম করে জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করেন। অন্যদিকে মা তারিণী দেবী’তো কোর্টে রামমোহনের বিরুদ্ধে মামলা-ই করে বসেন! বিচারের সময় সগর্বে উচ্চারণ করেছিলেন- ধর্মত্যাগী পুত্রের মস্তক যদি এখানে ছিন্ন করা হয় তাহলে আমি পুণ্য কাজ বলে মনে করব। ছেলে বিধর্মী, তাই পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারী যেন না হয় তার জন্যে তিনি মামলা করেন। রামমোহন প্রথমে মায়ের বিরুদ্ধে মামলায় লড়তে চাননি। কিন্তু তিনি পরে ভাবেন- এতে তার আন্দোলন সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হবে। এ জন্যে তিনি মামলায় লড়েন এবং জয়ী হন। মামলায় জয়ী হওয়ার পর তিনি তার প্রাপ্ত সম্পত্তি মাকে ফেরত দিয়ে দেন। কারণ, তাঁর যুদ্ধ তো মাময়ের মামলার বিরুদ্ধে নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
বাংলা গদ্য সাহিত্যে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি ধর্ম সংস্কারর জন্য যে সকল গ্রন্থ রচনা করেছিলেন সেগুলি বাংলা গদ্যের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। তিনি গৌড়ীয় ব্যাকরণ নামে একটি ব্যাকরণও রচনা করেন। তাঁর পূর্বে বাংলা ভাষায় দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম, ইতিহাস নিয়ে কোনও গ্রন্থাদি রচিত হয় নি। এছাড়াও সংবাদপত্রের উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে ভারতবাসীকে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দেবার দাবি জানিয়ে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের ‘প্রেস রেগুলেশন’ এর প্রতিবাদ জানিয়ে রাজা রামমোহন রায় সুপ্রীম কোর্টে দরখাস্ত পেশ করেছিলেন। ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দের বৈষম্যমূলক ‘জুরি আইন’ বন্ধ করার জন্য এবং কৃষকদের ওপর করের বোঝা কমাবার জন্য রাজা রামমোহন রায় বহু চেষ্টা করেন।
রামমোহন বলিষ্ঠ পুরুষ ছিলেন। শরীরের দৈর্ঘ্য ছিল ছয় ফুট উচ্চ। মাথা ছিল অস্বাভাবিক বড়। এই জন্যে বিলেতের বিশেষজ্ঞগণ তাঁকে অসাধারণ পুরুষ বলত। রামমোহন প্রতিদিন ১২ সের দুধ পান করতেন। শোনা যায় একবারে একটি আস্ত পাঠার মাংস খেতে পারতেন। কলিকাতায় তিনি যখন ধর্মমত প্রচার যখন শুরু করেন তখন কিছু মানুষ তাকে একাধিকবার হত্যার পরিকল্পনা করে। এই কথা শুনে রামমোহন বললেন-আমাকে মারবে? কলকাতার লোক আমাকে মারবে? তারা কী খায়?’’ এই কথার মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়, রামমোহনের নিজের শক্তি-সামর্থ্যের উপর যথেষ্ট আস্থা রাখতেন। রামমোহন শরীরের বিষয়ে বেশ যত্নবান ছিলেন। তিনি শরীরকে ভগবানের মন্দির মনে করতেন। সেই কালের অন্যদের মতন তাঁরও বাবরী চুল ছিল। রামমোহন যেমন খেতে জানতেন তেমনি পড়তে পারতেন। শোন যায়, রামায়ণ-এর মতন মহা-গ্রন্থ তিনি এক বসাতে শেষ করে ফেলতেন। রামমোহন মোট ১০টি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন-সংস্কৃত, পারসি, আরবি, উর্দু, বাংলা, ইংরেজি, ফরাসী, ল্যাটিন, গ্রিক ও হিব্রু। এসকল ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্যের সঙ্গেও রামমোহন পরিচিত ছিলেন।
তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বাইরের দেশে ভ্রমণ এবং সেখানে যা কাজ হচ্ছে, সেগুলোর সাথে বাংলার মানুষদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। তিনি জানতেন যে, শিক্ষা ছাড়া এই দেশের মানুষ কখনও উন্নতি করতে পারবে না। আবার উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তাদের মতো করে ভাবতে হবে, তাদের কাজগুলো বুঝতে হবে, তাদের সংস্কৃতির সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে হবে। রাজা রামমোহন রায়ের পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতি নিয়ে এবং তাদের সেখানে প্রতিনিয়ত তৈরি হওয়া জ্ঞান নিয়ে আমূল আগ্রহ ছিল।
তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আধুনিক এক ভারতের। দেশের মানুষকে অতীতমুখী, মধ্যযুগীয় মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের করে এনে এক নতুন যুগের জীবন দর্শনের আলো দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য।
মানুষকে ভালবেসে, বদ্ধ এই সমাজের মধ্যে আলোড়ন তুলে যিনি চেয়েছিলেন সমাজ ব্যবস্থার ক্ষতিকারক নানা দিক বদলে ফেলতে, তিনি রাজা রামমোহন রায়। সমাজে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও কুসংস্কারে কুঠারাঘাত করে যিনি হয়ে উঠেছিলেন ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম এক নায়ক।
রামমোহন রায় বাঙালির আত্ম-উন্মোচনের প্রথম পথিকৃত। সে জন্য পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যথার্থ বলেছেন- যেদিন মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় কলিকাতায় বাস করিতে আসিলেন (১৮১৬ খ্রি.), সেইদিন হইতে নূতন সৃষ্টির সূত্রপাত হইল। … ইনি ব্রাহ্ম সমাজের প্রথম স্থাপন কর্তা, ইনি সর্বপ্রথম সমাজ সংস্কারক, ইনি সর্বপ্রথম ইয়ং বেঙ্গল, ইহার ক্ষমতা অপার, ইহার বিদ্যা অগাধ, ইহার মতো দেশহিতৈষী তৎকালে আর কেহ ছিল না।’
আজ পৃথিবীজুড়ে মহাপুরুষের মহামারি । এর মধ্যে খুব কমজনই পেরেছেন সভ্যতাকে সত্যিকার এগিয়ে নিতে । রাজা রামমোহন রায় সেই সত্যিকার মহাপুরুষ।
১৭৭২ সালের ২২শে মে জন্ম নেওয়া এই মহাপুরুষটির আট দিনের জ্বর ভোগের পরে ব্রিস্টলে ১৮৩৩-এর ২৭ সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহনের মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ৬২ বছর বয়সে। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ আজও পরিষ্কার নয়। মৃত্যুর দশ বছর পরে দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁর সমাধির উপর একটি সুদৃশ্য স্মৃতি সৌধ তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন।
এই মহামানবের জন্মদিনে সভ্যতার প্রতিটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, মাথা নত প্রণাম ।

The king was walking restlessly. He looks very disappointed. If people oppose, then with whom will he fight? And for whom? Dhus, there is no profit in fighting anymore.
At that time, the doorman came and said that a rural Brahmin wanted to meet. A little annoyed, he said, now tell me I do not have time. The doorman said, I said. But he does not want to go. Then the king said, Send it.
A Brahmin entered the house. Short dhoti, namabali on the body, tiki on the head. The king's head gets hot as soon as he sees Tiki. What do you want to say in a rough voice? The Brahmin began to speak.
I am Mahadev Bhattacharya of Nadia. He stopped for a while, maybe he arranged a little. Started again. You know, that day was the month of Baishakh. As soon as he returned from the toll, Aparna came and jumped on his lap. He gave water, gave towels, gave air and fan. As much as he cares for me. The father is caressing the daughter. Then his mother called from the house. He said to go inside, the girl is 6 years old. How long will you keep it at home? Liability that leaves the neighborhood. I said, where can I get the pot? Whoever I go to. No one will take less than 1000 rupees. The temples whispered, "Not everyone has the same fortune." But caste religion must be kept. Yesterday a noble Brahmin came by river. The age is too high. In the 80's. But the lineage is high. He rescued his daughter for 50 rupees. Give Gauri to our Apu in her hand. I shouted, "No, it won't happen." But I understand the pressure of the society. Understand the pressure of the world. I fought a lot with myself and got married to Apu. The girl in red cheli, jewelry, Alta, vermilion looked like my goddess. I will say what form he is !! Probably the father's eye was on that day.
The next day, the son-in-law left his daughter and crossed the river again. To rescue someone else's daughter. He said he would come again next year.
Our father and daughter were living a happy life. Behind me all the time. Learned all the work. Couldn't just cook. What is the condition of blisters on the hands one day. I told her mother not to use her for cooking. He suffers from fire. What a happy girl that day. How fond of hugging me.
The month of Ashwin rolled by. Pujo is coming, all around Sajo Sajo Rob. I brought all the red sari and Alta for my daughter from the market. The girl is very happy. He said: O !! When will I read these. Dad, I feel like a queen, tell me? My eyes watered with joy. Happiness overflowed in the needy family.
Just the next day, you know, the very next day. It will be ten o'clock in the morning. People came from the daughter's father-in-law's house with letters. Narayan Banerjee laid down his body yesterday. They have instructed to make the daughter sati according to the proper rules. I thought I would tear the letter. But the correspondent came to my house after informing the village elders. There was no way. The king said then ???
Then I dressed the girl. The new red cheli sari, jewelery, Alta, Sindure girl is unique that day. Festivals and drums are playing in the village. Ayora is all vermilion on her head, taking her alta. And he himself is happy. Her favorite curd confectionery has filled the house. You know, he's too busy to feed me. The Brahmin stopped talking. He wiped his eyes and started again. He just could not understand what the festival was about.
Then came the news that the arrangement of cheetahs on the banks of the river was over. The aristocracy has instructed to take Satimata. I took the girl in my arms. I didn't cry at all. I didn't want to let him understand anything. All the formalities were done by the cheetah. The girl was all surprised. Hole leopard on fire. The cheetah burst into flames. The girl said father, let's go home. My big fear in the fire. I said, let go of my throat once mom. As soon as I let go of my young hands, I threw them into the fire. A rinrin was found in the middle of the fire, Baba… aa… aa… aa… aa… !!!
I could not forget that call. Since then I have not slept a single night. Just one sound to get up, sit down, eat and sleep. Dad… Aaa… Aaa… Aaa… Aa… !!!! I couldn't save him. You can Hold your feet. Save the girls. How many girls are in the village house than your face. Here we are, the girl's father and mother. I can't say for fear of society. But you can.
Raja Rammohun Roy stood up. He said, "You have given me strength." I have to be able to. If not here I will go to Britain. I will go to the Privy Council. I promised you.
The rest is history. Standing in that era, it cannot be explained how difficult his fight was. All the scholars of India, from the royal family of Calcutta, were against him. The storm of less condemnation and humiliation did not blow over him. But he was as intact as a banyan tree.
Raja Rammohun Roy understood that it was a sexual politics, a barbarity by showing greed for heaven. He had a constant struggle to keep the woman alive. He knew that his argument might have been accepted by the people for the time being, and if the law was not enacted, co-existence might occur again. So he stopped this cruel law by law.
By acknowledging the truth, the condemnation and disrespect that Rammohun received from his countrymen at that time, the condemnation and humiliation shows his greatness in a special way. The condemnation he received is the crown of his glory. ”
-Rabindranath Tagore
Raja Rammohun Roy (May 22, 184 - September 26, 1833) was born in India in the face of the storm of the French Revolution. Raja Rammohun Roy was born in the village of Radhanagar near Khanakul-Krishna Nagar in the Hooghly district of India. Father-Ramkant Roy, mother-Tarini Devi. Rammohun's ancestor earned the title of 'Rayarayan' by working for the Raj government. However, their tribal title is 'Bandyopadhyay'. Father Ramkanta and Tarini Devi were both devout people. Be a Vaishnava in the last life of Ramakanta and spend the last days of his life in Harinam. On the other hand, mother Tarini Devi filed a case against Rammohun in the court! Proudly uttered during the trial - if the head of the apostate son here
No comments
Please do not any spam in the comments Box.